রমজান মাহমুদ

রমজান মাহমুদ। কবি। শিশুসাহিত্যিক।

লিখে থাকেন ছড়া, কবিতা, গল্প, উপন্যাস, প্রবন্ধ, লিমেরিক, ক্লেরিহিউ ইত্যাদি।

তুখোড় ছন্দশিল্পী হিসেবে এই সাহিত্যকর্মী বেশ জনপ্রিয়। তিনি যেন শব্দ নিয়ে খেলেন, তৈরি করেন শব্দের রঙিন মালা। স্বতঃস্ফূর্ত প্রকাশভঙ্গি, শব্দবিন্যাসের নিপুণতা, গতিময় ছন্দের চমৎকার গাঁথুনি, বিষয়ের অভিনবত্ব তার ছড়া-কবিতার সহজাত বৈশিষ্ট্য। তার গদ্যের ভাষা মিষ্টি, উপাদেয়, সুখপাঠ্য।

দেশবিদেশের বিভিন্ন জাতীয় ও স্থানীয় পত্রিকা-ম্যাগাজিনে নিয়মিতলেখালেখি করেন। সম্পাদনা করেন ছোটদের সাহিত্য পত্রিকা ‘কিশোর কাগজ’, ছড়াবিষয়ক ছোট পত্রিকা ‘ছড়ার কাগজ’, লিমেরিকবিষয়ক ছোট পত্রিকা ‘লিমেরিক’। নিরীক্ষাপ্রবণ এই সাহিত্যকর্মী ইতোমধ্যে অর্জন করেছেন পাঠকপ্রিয়তা।

রমজান মাহমুদ-এর প্রথম বই ‘চিৎপটাং’-এর ভূমিকায় সুকুমার বড়ুয়া লিখেছেন :

”রমজান মাহমুদ

এনেছেন খাঁটি দুধ

যাতে আছে সার;

ছড়া আর লিমেরিক

সব লেখে ঠিক ঠিক

খাঁটি ছড়াকার।”

                                                  সুকুমার বড়ুয়া

রমজান মাহমুদ-এর ছড়া নিয়ে আমীরুল ইসলাম লিখেছেন :

‘‘কারও কারও লেখা কেন যে চোখের আড়ালে পড়ে যায় তা আমার কাছে আজও বোধগম্য নয়। অনেক লেখকের কোনো কোনো লেখা হয়তো এক জীবনে বুঝে উঠতে পারলাম না। আবার অনেক সময় সমকালের উচ্চস্তরের লেখাও চুপ করে শনাক্ত করতে পারি না। এই দোষ আমাদের সকলেরই কম বেশি আছে।

 

রমজান মাহমুদ সেই শক্তিমান কবি যিনি চোখের আড়ালেই থাকেন। কেন? হয়তো রমজান মাহমুদ অতি ভদ্র মানুষ। তিনি খুব চুপচাপ। আত্মপ্রচারে সক্রিয় নন। তিনি চুপচাপ থাকতে পছন্দ করেন। সাম্প্রতিক সাহিত্যের খুব খোঁজখবর রাখেন। ছড়াকার হিসেবেই রমজান মাহমুদ সমধিক খ্যাতিমান। দীর্ঘ  প্রায় তিন যুগ ধরে তিনি ছড়া লিখছেন। তার ছড়ায় নিজস্বতা আছে। ছন্দ নির্ভুল। বিষয়ের উপস্থাপনা ভিন্ন ধারার। আর তার লেখা নতুন ধাঁচের।

দারুণ প্রতিভাবান এক কবি রমজান মাহমুদ। স্থিরতা তার চরিত্রের বৈশিষ্ট্য। তার ছড়া-কবিতার মধ্যেও তা অনুভব করা যায়। বহু রকমের ছড়া আছে তার। তবে আমি তার ছড়ায় ভিন্নধর্মী উপস্থাপনা, ছন্দের বৈচিত্র খুঁজে পাই। আর তথাকথিত বাজার চলতি বিষয় নিয়ে তিনি ছড়া লেখেন না। তার ছড়া গভীর অর্থবহ। সবচেয়ে বড়ো কথা, তার ছড়া লোকছড়ার সহজ বৈশিষ্ট্য ধারণ করে থাকে।

ছড়া অনেক রকমের । প্রবন্ধ, ধাঁধা, শিশু মনোরঞ্জক, সামাজিক দ্বন্দ্ব-সমস্যা, লোকগাথা, ব্যক্তি-সবকিছুই তার ছড়া ধারণ করতে পারে। রমজান মাহমুদের ছড়া পড়ে উপলব্ধি হলো, তার ছড়া সহজ ভাষায় কঠিন বিষয় নিয়ে রচিত। কিংবা তার ছড়া দার্শনিকতাপূর্ণ।

আমাদের ছড়াসাহিত্যে যারা স্বনামখ্যাত হয়েছেন তাদের প্রত্যেকের মধ্যেই আলাদা কিছু বৈশিষ্ট্য আছে। যারা নিজস্ব বৈশিষ্ট্যমণ্ডিত, আমি তাদের মুগ্ধ পাঠক হয়ে যাই। রমজান মাহমুদের ছড়ার আমি একজন মুগ্ধ পাঠক। সত্যি সত্যি তিনি একজন শক্তিমান কবি।

রমজান মাহমুদ ছড়ায় নিবিষ্ট ব্যক্তি। তিনি আত্মমগ্ন কবি। ছড়ার আত্মনিবেদনই তাকে প্রকৃত ছড়াকারে রূপান্তরিত করেছে। ছড়া নিয়ে তিনি নানারকম চিন্তাভাবনাও করে থাকেন। রমজান মাহমুদ একজন নিরীক্ষাপ্রবণ ছড়ালেখক। চেনা পথে তিনি হাঁটতে চান না। চেনা পথের বাইরে তার যাতায়াত।

রমজান মাহমুদ ছড়া আন্দোলনেরও একজন সম্মুখ সারির সৈনিক। নিখুঁত ও সর্বৈধ ছড়ার বই ছাড়াও লিমেরিকের বই লিখেছেন দুটো। ‘ক্লেরিহিউ’ অর্থাৎ নামকরণের ছড়ার বইও আছে একটা। বইটার নাম ‘জগৎ জুড়ে আলোর মেলা’। লিমেরিক নিয়ে রমজান মাহমুদের অনেক আগ্রহ। তিনি লিমেরিক রচয়িতাদের নিয়ে সংগঠনও করেছেন। ‘লিমেরিক’ নিয়ে ছড়া-পত্রিকা সম্পাদনা করেছেন। এছাড়া ‘ছড়ার কাগজ’ নিয়ে একটি অনিয়মিত প্রকাশনাও আছে তার।

ছড়াকার সমাজে নিরীক্ষার প্রচেষ্টা খুব কম। রমজান মাহমুদ সেই বিরল প্রতিভা। ছড়া পাঠকদের অনুরোধ করি, রমজান মাহমুদের ছড়া পড়ে দেখুন। অন্য রকম ভালোলাগায় মন আচ্ছন্ন হবে।”

আমীরুল ইসলাম

-রমজান মাহমুদ